Friday, December 2, 2016

শিড়ির পরিবর্তে র‍্যাম্প বা স্লোপ (ঢালু) যুক্ত ফূটওভার ব্রীজ! - ডা: শেখ আনোয়ার উল্লাহ্ খন্দকার আকাশ - খন্দকার লতিফা ইয়াসমীন (বি.এ.)  

শিড়ির পরিবর্তে র‍্যাম্প বা স্লোপ (ঢালু) যুক্ত ফূটওভার ব্রীজ !
- খন্দকার লতিফা ইয়াসমীন (বি.এ.) !
- ডা: শেখ আনোয়ার উল্লাহ্ খন্দকার আকাশ !

আমাদের দেশের মত উন্নয়নশীল দেশগুলোতে শড়ক দূর্ঘটনা ও ট্রাফিক আইন একটি বড় সমস্যা! অনেক সময় ফুটপাথ ও ফুটভারব্রীজ থাকা সত্ত্বেও পথচারীরা তা ব্যাবহার করতে অনিচ্ছুক থাকেন! জীবনের ঝুকি নিয়ে পথ চলাচল করতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটা রেয়ার ঘটনা নয়, আবার রাস্তা পারাপারকারি পথচারী/সাইকেল আরোহীদের সেইভ করতে গিয়ে অন্যান্য যানবাহনের দুর্ঘটনায় আক্রান্ত হওয়াটাও আমাদের দেশে নতুন বা অস্বাভাবিক কিছু নয়!
প্রায় অসুস্থতাজনিত বা বার্ধক্যজনিত দুর্বলতার কারনে অনেক মুরুব্বী বা অসুস্থ পথচারীগন ফুটভার ব্রীজ ব্যাবহার করতে চান না! শিরি ভেঙে উঠলে ক্লান্ত হয়েযাবে কিংবা সময় বেশী লাগবে এই ভেবে অনেকেই বেশি ঝুকি নিয়েই রাস্তা পারাপার করেন! পঙ্গু বা প্রতিবন্ধী ও সাইকেল আরোহী ভাইয়েরা যেন আরো বেশী অসহায়! একজন সাইকেল বা হুইলচেয়ার আরোহী ও বাতের বেথায় আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য ফুটওভারের শিরি ভাঙা অসম্ভব, আর ব্যস্ত সড়কের মাঝদিয়ে পারহওয়াটা স্রোতের বিপরিতে নৌকা চালানোর মতই কঠিন!
এখানে সাইকেল আরোহি লোকদের কথাটাও বলছি কারন রিক্সা বা বাসে চরার মত বাজেট নেই এমন অনেক ভাই-বোন আছেন যারা সাইকেল চালাতে আগ্রহী, কিন্তু বড় রাস্তার উগ্র ট্রাফিকের কারনে তাদেরকে অত্যন্ত ঝুকি নিয়ে চলাচল করতে হয়!

আমাদের দেশের কনভেনশনাল ফুটভার ব্রীজ ও ফুটপাথ গুলো অসুস্থ, বৃদ্ধ ও দুর্বল মানুষদের জন্য একেবারেই উপযোগী নয় আর বেশীরভাগ ড্রাইভার ভাইয়েরা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ড্রাইভিং করায় জেব্রাক্রসিং গুলোও একপ্রকার কোনোও কাজের থাকেনা!


শিরি ভেঙে উঠতে কারই বা কষ্ট না হয়! আর এরই জন্যে অনেকেই শিরি যুক্ত ফুটভারব্রীজে উঠতে চান না! বিশেষ করে বৃদ্ধ ও অসুস্থ লোকেরা ফুটওভারব্রীজ সবসময় এভয়েড করেন!


কনভেনসনাল ফুটপাথগুলোও ঠিক তাই!
এই সুউচ্চ ফুটপাথগুলোর দুইপ্রান্ত উঁচু শিরির ন্যায় হওয়ায় দীর্ঘক্ষন এইরকম ফুটপাথ দিয়ে চলাচল করলে ওই দুইপ্রান্ত বারবার উঠানামা করে যে কোনও সুস্থ ব্যক্তিও ক্লান্ত হয়ে পড়বেন!
আর তাই পথচারীগন প্রায়ই ফুটপাত থাকা সত্তেও তা পরিহার করে ঝুকি নিয়েই রাস্তা দিয়ে হাটেন


এমতাবস্থায় আমাদের ফুটপাথ ও ফুটওভারব্রিজ গুলো এমন হতে হবে জেন উহা উঠে পার হওয়াটা অসুস্থ ও মুরুব্বী লোকদের জন্য মুশকিল না হয়ে দাঁড়ায়, আবার তাড়ায় আছেন এমন লোকেরা দ্রুত পার হতে পারেন, আবার হুইলচেয়ার ও সাইকেল আরোহী পথচারীরা বিশেষ করে সাইকেল আরোহী স্কুলগামী শিশুরা যাতে সহজেই পারহয়ে যেতে পারে!

ফুটপাথ ও ফুটভারব্রীজ গুলোর শিরি গুলোর বদলে যদি ঢালু র‍্যাম্প বা স্লোপের ব্যাবস্থা করা যায়, অর্থাৎ যেমনটি গাড়ির জন্য তৈরি ব্রীজ ও ওভারপাসগুলোতে থাকে তাহলে হয়ত এই সমস্যার অনেকটাই সমাধান হবে! (এখানে একটা বিশয় উল্লেখ্য যে মানুষজন রিলাক্স করার জন্য বা ঘুরে বেরানোর জন্যও প্রায়ই ফ্লাইওভার/ব্রীজের ওপরে উঠে, অথচ প্রয়জনের সময়ও ঝুকি নিয়ে রাস্তা পার হয় কিন্তু ফুটওভারব্রীজ ব্যাবহার করেনা! এর কারন হয়ত গাড়ির জন্য তৈরি র‍্যাম্পযুক্ত ব্রীজ/ফ্লাইওভারগুলো দেখতেও রিলাক্সিং আর চড়তেও আরাম!)





কিন্তু সুধু র‍্যাম্প থাকাটাই হয়ত যথেষ্ট হবেনা!
র‍্যাম্প গুলোতে যাতে মানুষ সহজে উঠেপড়তে পারে তার জন্য র‍্যাম্প গুলো যথা সম্ভব কম উচ্চতা তথা কম খাড়া হতে হবে!


(উল্লেখ্য যে যদি ফুটওভারব্রীজ ও ফুটপাথ দিয়ে সাইকেল ও হুইলচেয়ার নিয়ে চলাচল করা যায় তাহলে সড়কের উপর চাপ কমবে, রিক্সার উপর নির্ভরতা কমবে আর পথচারীগনও নিরাপদে ও সহজে চলাচল করতে পারবে!)


হুইল চেয়ার ও সাইকেলের জন্য যথেষ্ট চওড়া এবং রেলিং বিশিষ্ট হতে হবে! প্রয়োজনে রেলিং ধরে সাপোর্ট নেওয়া যায় এমন রেলিং হতে হবে!

রোদ ও বৃষ্টির জন্য ছাউনির ব্যাবস্থাও থাকবে!

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে ফুটওভারব্রীজ দেখে পথচারীরা যাতে ভয় না পায়! অনেক সময় বিকট চেহারার ফুটভার ব্রীজ দেখে অনেক পথচারী উঠতেই সাহস পাননা, দেখেই জেন মনে হয় উঠতে গেলে ক্লান্ত ও অসুস্থ হয়ে পড়ব! আবার ফুটওভারব্রীজ বিশাল বা অনেক দীর্ঘ বা জটিল আকৃতির হলে সেই ব্রীজ দেখলেই মনে হয় পার হতে হয়ত অনেক সময় লেগে যাবে আর আমি সময়মত পৌছাতে পারব না! এর জন্য ফুটওভারব্রীজ গুলো অতি সরল আকারের, দেখতে সুন্দর ও রিলাক্সিং হতে হবে যেন দেখে মনে হয় সহজে ও আরামে পার হওয়া যাবে!

"U"  আকৃতির বা আর্চ আকৃতির ব্রীজ হলে সেটা দেখতে সরল হবে! আর মনে হবে ব্রীজটি অতিদীর্ঘ নয় আর মনে হবে এটা পার হতে সহজ হবে! এবং তা পার হওয়া সহজই হবে!

উদাহরণ সরুপ হাতির ঝীলের এই ব্রীজটির কথা বলা যেতে পারে : -


আবার উদাহরন সরুপ রমনা পার্ক সংলগ্ন এই ব্রীজটির কথাও বলাযেতে পারে : -



সুধু ফুটওভারব্রীজই নয়, ফুটপাথ গুলোও হতে হবে পথিকবান্ধব!



একটি কনভেনশনাল ফুটপাথ, যা পথিকবান্ধব নয়!






একটি ফুটপাথ এমন হবে যে সেটির উচ্চতা মূল সড়কের লেভেলে হবে, অর্থাৎ ফুটপাথ আর সড়ক পরস্পর সমান সমতলে থাকবে! এতে করে বার বার শিরি আকৃতির উঁচু ফুটপাতে উঠানামা করতে হবে না, আর তা হলে তা ব্যাবহার অত্যন্ত সুবিধাজনক হবে!
আর তা ছাড়া যদি সাইকেল ও হুইল চেয়ার চালানোর ব্যাবস্থা থাকলে পথচারিরা বিশেষ করে অসুস্থ ও পঙ্গু পথচারিরা অনেক উপকৃত হবেন! সাইকেল চালানো গেলে উন্নত দেশগুলোর সাইকেল লেনের বিকল্প হতে পারে এই ফুটপাথ গুলো! আর তাহলে সড়কের উপর চাপ ও রিকশার উপর নির্ভরতা কমবে!



ফুটভারব্রীজ ও ফুটপাথ নিয়ে অভিযোগ এর আরেকটি বিষয় হল পরিচ্ছন্নতা! প্রায়ই দেখা যায় ফুটওভারব্রীজ ও ফুটপাথগুলো অপরিষ্কার আর এ নিয়ে অনেককে অভিযোগ করতেও দেখা যায়! আবার ফুটভারব্রীজ ও ফুটপাথগুলো অপরিষ্কার থাকায় অনেকে তা ব্যাবহার করতে চাননা!
তাই ফুটভারব্রীজ ও ফুটপাথগুলো এমন হতে হবে যেন খুব সহজেই তা পরিষ্কার করা ও রাখাযায়!



ব্রীজের দুইপাশে সমান্তরাল পজিশনে ড্রেন / নালা থাকবে ও পানির ব্যাবস্থা থাকবে যাতে সহজে পরিস্কার করা যায়!



আর ফুটপাথগুলোর নিচে থাকবে পানি ও ময়লা নিষ্কাসন ব্যাবস্থা!


No comments:

Post a Comment